শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০২:১৭ পূর্বাহ্ন
আবুল বাশার শেখ, ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি::
নবজাতক জন্মের ২৪ ঘন্টা থেকে সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে তার জন্ম নিবন্ধন ও নাগরিকত্ব সনদ প্রস্তুত করে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নিজ উদ্যোগে তার পরিষদের অন্যান্যদের সঙ্গে নিয়ে নবাগত শিশুর বাড়িতে গিয়ে নতুন জামা-কাপড় ও মিষ্টি দিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। ফুল দিয়ে সম্মাননা জানাচ্ছেন নবজাতকের মা’কে। একই সময় শিশুর মায়ের হাতে তুলে দিচ্ছেন জন্ম নিবন্ধন ও নাগরিকত্ব সনদ। নাগরিক অধিকার সুরক্ষণ করতে ৪৫ দিনের মধ্যে বিনা ফি’তে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধণ সনদ প্রদানের জন্য সরকারী নির্দেশনা থাকলেও ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ১১নং রাজৈ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাদশা এমন অসাধারণ উদ্যোগ গ্রহন করেছেন। তাঁর এই অসাধারণ উদ্যোগটি শুধু এলাকায় নয়, সমগ্র উপজেলা ও জেলাতেও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সময় মতো জন্ম ও মৃত্যু সনদ গ্রহনে সাধারণ জনগণের মাঝে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে।
এ অসাধারণ উদ্যোগ ও ওই ইউনিয়নে গত দেড় মাসে রেকর্ড সংখ্যক জন্ম ও মৃত্যু সনদ বিতরণ করায়, গত ৬ অক্টোবর “জাতীয় জন্ম নিবন্ধন দিবস-২০২০” উপলক্ষ্যে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানে ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার রাজৈ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ নূরুল ইসলাম বাদশা ও সচিব মোহাম্মদ আরিফ খাঁন চৌধুরীকে জেলার শ্রেষ্ঠ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সচিব নির্বাচন করে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোঃ মিজানুর রহমান তাদেরকে সম্মাননা স্মারক ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করেন।
ভালুকা উপজেলার ১১নং রাজৈ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাদশা জানান, নাগরিক অধিকার সুরক্ষণ করতে ৪৫ দিনের মধ্যে বিনা ফি’তে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধণ সনদ গ্রহনের জন্য সরকারী নির্দেশনা থাকলেও অসচেতনতার কারনে জনগন তা গ্রহন করেন না। একটি শিশুর বয়স যখন ৬ বছর হয় তখন তাকে স্কুলে ভর্তি করার জন্য তার অভিভাবক ইউনিয়ন পরিষদে আসেন জন্ম সনদের জন্য। এ ক্ষেত্রে প্রায় প্রতিটি পিতা-মাতাই তার শিশু সন্তানের জন্ম তারিখ সঠিক করে বলতে পারেন না। অনেক কষ্ট করে কেউ কেউ বাংলা সনের মাস মনে করতে পারেন অনেকেই তাও পারেন না। তখন বাধ্য হয়েই জন্ম সনদে আনুমানিক জন্ম তারিখ লিপিবদ্ধ করতে হয়। অভিভাবকদের অসচেতনতায় একজন শিশুর নতুন জীবন শুরু করছে মিথ্যে দিয়ে, এটা অত্যন্ত দুঃখ্যজনক। শিক্ষা জীবন শেষ করে ওই শিশুটি যখন চাকুরী জীবনে প্রবেশ করবে, তখন চাকুরীর বয়স সীমায় এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে, এ ভাবনা থেকেই আমার এ উদ্যোগ। এ ছাড়াও ইউনিয়ন বাসীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ থাকাটাও জরুরী, এ উপলক্ষ্যে তা হচ্ছে।
১১নং রাজৈ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোহাম্মদ আরিফ খান চৌধুরী জানান, চেয়ারম্যান মহোদয়ের এ উদ্যোগ গ্রহনের ফলে, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধণ সনদ গ্রহনে ইউনিয়ন ব্যাপী ব্যাপক সাড়া পড়েছে। বর্তমানে এই ইউনিয়নের যে কোন গ্রামে কোন শিশুর জন্ম হলেই, ওই দিনই চেয়ারম্যান, সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য কিংবা আমাকে ফোনে বা সরাসরি তা অবহিত করছেন।
১১নং রাজৈ ইউনিয়নের সোহাল গ্রামের মোঃ শফিুল ইসলাম জানান, আমাদের শিশু পুত্র মোঃ সালমান ইসলাম সরকার জন্মের ৭ম দিন হঠাৎ করেই আমার ছেলের জন্য নতুন জামা-কাপড়, মিষ্টি, নাগরিকত্ব ও জন্ম সনদ নিয়ে চেয়াম্যান সাহেব, কয়েকজন মেম্বার ও সচিবকে নিয়ে আমার বাড়ীতে উপস্থিত হয়। তারা আমার শিশুপুত্রকে কোলে নিয়ে আদর করে তার জন্য দোয়া করেন। এ সময় আমার স্ত্রী নারগিস আক্তারকে ফুলের তোরা উপহার দিয়ে সম্মানিত করেন। এটা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের, এতে আমরা অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করি। এমন অনুভুতি প্রকাশ করেন, পারুলদিয়া গ্রামের মোঃ আল আমিন মন্ডল ও তার স্ত্রী তানিয়া আক্তার।
ইউপি সদস্য মোঃ হুমায়ুন কবির খান জানান, চেয়ারম্যান সাহেবের এ উদ্যোগ জনগনের সেবার ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এতে ইউনিয়নবাসীর মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। অধিকাংশই প্রশংসা করছেন। অপর ইউপি সদস্য মোঃ বুলবুল আহাম্মেদ চেয়ারম্যানের এ ধরণের জনসেবামূলক উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এতে তিনি সহ আমরা পরিষদের সকলেই ইউনিয়নবাসীর কাছে সম্মানিত হচ্ছি। আমরা আগের চেয়ে অনেক বেশি জনগনের কাছে যাওয়া ও তাদের সাথে সুখ-দুঃখ শেয়ার করার সুযোগ পাচ্ছি।
ইউএনও সালমা ইসলাম জানান, রাজৈ ইউনিয়ন পরিষদের অসাধারণ একটি উদ্যোগ। জন্ম নিবন্ধন সনদ সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করতে জন্মের পর পরই ওই শিশুর জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রস্তুত করে চেয়ারম্যান সাহেব নিজে তার পরিষদের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে নবাগত শিশুকে নতুন জামা, ফুল, ও মিষ্টি দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন এবং শিশুর মায়ের হতে তুলে দিচ্ছেন জন্ম নিবন্ধন সনদ। এমন ভালো কাজে আমিও একদিন অংশগ্রহণ করি। পাইলাব ও খুর্দ্দ নামক দুই গ্রামে যেয়ে ০৫ দিন বয়সী একটি কন্যা শিশু এবং ১৪ দিন বয়সী একটি ছেলে শিশুর মায়ের হাতে তুলে দেই জন্ম নিবন্ধন সনদ। এতে ওই ইউনিয়নবাসী জন্ম নিবন্ধন সনদ সংক্রান্ত বিষয়ে উৎসাহী ও সচেতন হচ্ছেন। এটা অত্যন্ত ভালো একটি উদ্যোগ, আমি চাই রাজৈ ইউনিয়নের মতো উপজেলার সকল ইউনিয়ন পরিষদ এ ধরণের উদ্যোগ গ্রহন করুক।